Table of Contents
বাংলা প্রথম পত্র
বই পড়া : প্রমথ চৌধুরী
সৃজনশীল-> ১ : জাতীয় জীবনধারা গঙ্গা- যমুনার মতোই দুই ধারায় প্রবাহিত। এক_ধারা নাম আত্মরক্ষা বা_স্বার্থপ্রসার, আরেক ধারার নাম আত্মপ্রকাশ বা পরামর্থ বৃদ্ধি। একদিকে যুদ্ধবিগ্রহ, মামলা-ফ্যাসাদ প্রভৃতি কদর্য_দিক, অপরদিকে সাহিত্য, শিল্প, ধর্ম প্রভৃতি কল্যাণপ্রদ দিক। একদিকে শুধু কাজের জন্য কাজ। অপরদিকে আনন্দের জন্য কাজ। একদিকে সংগ্রহ, আরেক দিকে_সৃষ্টি। যে জাতি দ্বিতীয়_দিকটির প্রতি উদাসীন থেকে শুধু প্রথম_দিকটির সাধনা করে, সে জাতি কখনও উঁচু জীবনের অধিকারী হতে পারে না।
ক. ”ভাড়েও-ভবানী”” অর্থ কী?
খ. অন্তর্নিহিত শক্তি বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত প্রথম দিকটি “বই পড়া” প্রবন্ধের যে দিকটির ইঙ্গিত করে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে পরমার্থ বৃদ্ধির প্রতি যে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা “বই পড়া” প্রবন্ধের লেখকের মতকে সমর্থন করে ।৮- মন্তব্যটি বিচার কর।
আরো পড়ুনঃ বই পড়া প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তরউত্তর দেখে নিন
ক. ‘ভাড়েও ভবানী” অর্থ হচ্ছে রিক্ত বা শৃন্য।
খ. অন্তর্নিহিত শক্তি বলতে নিজের মনকে নিজে যথার্থ উপায়ে গড়ে তোলার শক্তিকে বোঝানো হয়েছে। তোলা। যে মানুষ সত্য, ন্যায় ও মানবকল্যাণ নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করেন, তিনিই প্রকৃত শিক্ষিত। এই শিক্ষা অর্জন করতে হয়, কেউ কাউকে দিতে পারে না। এই কারণেই শিক্ষক কেবল শিক্ষার্থীদের পথ দেখাতে পারেন, কৌতুহল বাড়াতে এশ্বর্ষের সন্ধান দিয়ে তাদের জ্ঞান- পিপাসা বাড়াতে পারেন। এর বেশি কিছুই তীর পক্ষে সম্ভব নয়। প্রকৃত শিক্ষক বা যথার্থ গুরুতার শিষ্যের অন্তর্নিহিত সব প্রচ্ছন্ন শক্তি ব্যক্ত করার উপায় বলে দেন।
গ.
উদ্দীপকে বর্ণিত প্রথম দিকটি “বই পড়া” প্রবন্ধের শিক্ষাপদ্ধতির দিকটিকে ইঙ্গিত করে। শিক্ষা হচ্ছে আনন্দের মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত জ্ঞান যা জীবন ও জগতের কল্যাণ সাধনে ব্যবহারযোগ্য।
জোর করে চাপিয়ে দেওয়া আর দায়ে পড়ে মুখস্থ করে সনদপত্র অর্জন করা শিক্ষা নয়। প্রকৃত শিক্ষা তো নয়ই। যথার্থ শিক্ষিত হতে হলে মনের যে প্রসারতা দরকার তা কেবল পাঠ্যাভ্যাসের মাধ্যমেই সম্ভব। উদ্দীপকে আত্মস্বার্থ ও পরকল্যাণ এই দুটি প্রধান বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। “বই পড়া” প্রবন্ধেও প্রধান দুটি বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একটি স্বার্থরক্ষার শিক্ষা বা অর্থ উপার্জনের শিক্ষা, অন্যটি মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগ করার প্রকৃত শিক্ষা বা বই পড়ে অর্জন। এখানে উদ্দীপকে আলোচনার প্রথম দিকটির সাথে “বই পড়া” প্রবন্ধের অর্থ উপার্জনের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উদ্ধীপকে প্রথম দিকগুলো হচ্ছে আত্মরক্ষা বা স্বার্থপ্রসার, যুদ্ধবিগ্রহ, মামলা- ফ্যাসাদ প্রভৃতি।
অন্যদিকে “বই পড়া” প্রবন্ধে আছে স্কুল- কলেজের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাপদ্ধতি, জোর করে বিদ্যা গেলানো, শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা না করে তাদের শিক্ষাদান, তাদের স্বশিক্ষিত হয়ে ওঠার সুযোগ না দিয়ে বাধা সৃষ্টি করা প্রভৃতি। এভাবে উদ্দীপক ও ‘বই পড়া” প্রবন্ধের নেদিবাচক দিকগুলো আলোচনা করলে এগুলোর উভয়ের মধ্যে গভীর মিল পাওয়া যায়।
ঘ.
উদ্দীপকে পরমার্থ বা পরম সত্য বৃদ্ধির প্রতি যে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা “বই পড়া” প্রবন্ধের লেখকের মতকে সমর্থন করে।- মন্তব্যটি যথার্থ। শিক্ষা মানুষকে আত্মিক ও মানসিক বিকাশ সাধন করে কল্যাণকামী কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত করে। যে শিক্ষা তা করে না, তাকে প্রকৃত শিক্ষা বলা যায় না।
আমাদের স্কুল-কলেজের রুটিন মেনে যে শিক্ষা দেওয়া হয়, তাতে প্রকৃত শিক্ষা লাভ হয় না। কারণ প্রকৃত শিক্ষা হচ্ছে স্বশিক্ষা, যা মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যচিত্তে, স্বতস্ফুর্তভাবে অর্জন করে। আর তা অর্জনের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে লাইব্রেরি বা পাঠাগার। “বই পড়া” প্রবন্ধের লেখক বই পড়ার উপযোগিতা ও পাঠকের মানসিকতা আলোচনা করেছেন। তিনি পাঠে অনীহার কারণ হিসেবে আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন।
প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে আমাদের অর্থ উপার্জন করতে শেখায়, কীভাবে আমাদের হৃদয় বৃত্তিকে প্রস্ফুটিত না করে নষ্ট করে দেয়, সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। সেই ব্যখ্যাটির সাথে উদ্দীপকের পরমার্থ বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি সাদৃশ্যপর্ণ উদ্দীপকে লেখক আত্মপ্রকাশ বা পরমার্থ বৃদ্ধির কথা বলেছেন। তিনি কল্যাণের দিকটিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে জাতির উন্নতির দিকটি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি মনে করেন, যে জাতি আত্মপ্রকাশের প্রতি উদাসীন থেকে শুধু আত্মরক্ষার দিকটির সাধনা করে, সেই জাতি উঁটু জীবনে প্রবেশ করতে পারে না।
“বই পড়া” প্রবন্ধেও লেখক বলেছেন যথার্থ শিক্ষিত হয়ে উঠতে পরিপূর্ণ করে তুলতে হবে। স্বশিক্ষা হচ্ছে প্রগতিশীল জীবন ও জগতের সাথে তাল মিলিয়ে চলার শিক্ষা। উদ্ধীপকে লেখক জাতিকে উন্নত জীবন লাভে পরমার্থের সাধনার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন যা “বই পড়া” প্রবন্ধের লেখকের মতামতকে প্রতিফলিত করেছে।
আরো পড়ুনঃ বই পড়া প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর