Tech Tips

কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখার উপায়

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আপনি ভাইরাস শব্দের কথা শুনেছেন। যখনই আমরা ভাইরাসের কথা শুনি তখন কিন্তু একটা ক্ষতিকর দিক উঠে আসে। অর্থাৎ ভাইরাস একটি খারাপ দিক বা আমাদের ক্ষতি সাধন করতে পারে। আমরা আপনাদের সামনে আজকে যে ভাইরাসের কথা বলবো সেটা শরীরের কোন ক্ষতি করে না। অর্থাৎ আজকে আমরা কম্পিউটারের ভাইরাসের কথা বলব। 

কম্পিউটার ভাইরাস হচ্ছে এমন এক মারাত্মক বস্তু যা একটি কম্পিউটারকে নিমিষেই শেষ করে দিতে পারে। এ কারণে আপনার অবশ্যই কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে জানতে দরকার। তাই আপনাদের সামনে আজকে কম্পিউটার ভাইরাস কি, কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার ও কি কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি,পুরোটা সময় আমাদের সঙ্গে থাকবেন। 

কম্পিউটার ভাইরাস কাকে বলে

কম্পিউটার ভাইরাস হলো এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই কম্পিউটারের ক্ষতিস সাধন করে বা নিজের প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে থাকে। কম্পিউটার ভাইরাস মূলত এমন এক বস্তু যা কম্পিউটার প্রগ্রাম দিয়ে তৈরি করা হয়। কম্পিউটারে যেমন বিভিন্ন ধরণের সফটওয়্যার আছে। সে সফটওয়্যার কম্পিউটার প্রগ্রাম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। ঠিক তেমনি ভাবে কম্পিউটার ভাইরাস এই প্রোগ্রামের সাথে মিশে তাদের প্রতিরূপ সৃষ্টি করে। যার ফলে একটি কম্পিউটার খুব অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে যায়। 

এছাড়াও অন্যভাবে বলা যায়, কম্পিউটার ভাইরাস হলো এক ধরণের ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার যা কম্পিউটারের বিভিন্ন তথ্য ও সফটওয়্যারের ক্ষতি সাধন করে ডাটা চুরি করে মানুষের ক্ষতি করে থাকে। আশা করি,কম্পিউটার ভাইরাস কি তা পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন। কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে আর বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য নিচের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন। 

কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার ও কি কি

আপনার যদি কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে তাহলে আপনার কম্পিউটারে কখনো ভাইরাস প্রবেশ করতে পারবে না। তারপরও যদি কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করে তাহলে আপনি অবশ্যই তার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এই কারণে কম্পিউটারে কয় ধরনের ভাইরাস রয়েছে তা জানা দরকার। 

এছাড়াও ভাইরাসগুলো কিভাবে সনাক্ত করবেন তা জানা থাকলে,আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার কম্পিউটারে কোন ধরনের ভাইরাস অ্যাটাক করেছে। চলুন কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার ও সেগুলোর বর্ণনা দেখে নেই। 

  • রিসাইডেন্ট ভাইরাস
  • ডাইরেক্ট এ্যাকশন ভাইরাস 
  • মাল্টিপার্টাইট ভাইরাস
  • ব্রাউজার হাইজ্যাকার
  • ম্যালওয়ার ভাইরাস
  • ওয়েব স্ক্রিপটিং ভাইরাস
  • অ্যাডওয়ার ভাইরাস
  • ওভাররাইড ভাইরাস
  • ফাইল ইনফেক্টর 

রিসাইডেন্ট ভাইরাস

কম্পিউটারের অন্যতম প্রধান একটি ভাইরাস হল রিসাইডেন্ট ভাইরাস। এ ভাইরাসকে মূলত আবাসিক ভাইরাস বলা হয়। আবাসিক ভাইরাস বলার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো এই ভাইরাস কম্পিউটারের র্যামের সাথে বসবাস করে। কম্পিউটার র্যামের সাথে বসবাস করার পর কম্পিউটারের অনেক বেশি ক্ষতিসাধন করে। এই ভাইরাস মূলত এতই ক্ষতিসাধন যে আপনি অ্যান্টিভাইরাসের দাড়াও এটি শনাক্ত করতে পারবেন না। কারণ এটি মূলত কম্পিউটারের র্যামের মধ্যে বসবাস করে। তাই এই ভাইরাসকে দূর করা একটু কঠিন হয়ে যায়।

ডাইরেক্ট এ্যাকশন ভাইরাস 

কম্পিউটারের অন্যতম আরেকটি ভাইরাস হলো ডাইরেক্ট একশন ভাইরাস। এ ভাইরাস মূলত কোন একটি ফোল্ডারের মধ্যে তাদের প্রতিরুপ সৃষ্টি করে। সাধারণত এই ভাইরাস গুলো এক্সিকিউটেবল ফাইল(.exe) হয়। ফাইলগুলোর প্রতিলিপি বা কপি তৈরি করে সংক্রমিত করে। তাই এ ভাইরাসগুলো শনাক্ত করা খুব একটা কঠিন নয়। খুব সহজেই সনাক্তকরণ করা যায় বলে,এই ভাইরাস গুলো বেশি দিন কম্পিউটারের টিকে থাকতে পারে না। 

মাল্টিপার্টাইট ভাইরাস

কম্পিউটারের ক্ষত সাধন ভাইরাস গুলোর মধ্যে মাল্টিপার্টাইট ভাইরাস অন্যতম। কারণ এই ভাইরাস গুলো একত্রিতভাবে কাজ করে। ইউজারদের অনুমতি ছাড়া কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে এটি অপারেটিং সিস্টেম, ফোল্ডার ও প্রোগ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু এ ভাইরাসটি বহুদলীয় ও একত্রিত হিসেবে কাজ করে। তাই এ ভাইরাস দূর করা একটু কঠিন হয়ে যায়। 

ব্রাউজার হাইজ্যাকার

আপনি নিশ্চয়ই জীবনে হাইজ্যাকার শব্দ শুনেছেন। যাকে সাধারণত ছিনতাইকারি বলা হয়। ঠিক তেমনি একটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম হল ব্রাউজার হাইজ্যাকার। এ ধরনের ভাইরাস মূলত ব্যবহারকারীর ওয়েব ব্রাউজারে আক্রমণ করে। ধরুন আপনি যদি গুগল ক্রোম ব্যবহার করেন। তাহলে এ ভাইরাসগুলো আপনার গুগল ক্রোম ব্রাউজারে আক্রমণ করবে। তবে এ ভাইরাস গুলো খুব সহজে সনাক্ত করতে পারবেন। 

ম্যালওয়ার ভাইরাস

কম্পিউটার যতগুলো ভাইরাস রয়েছে তার মধ্যে সবথেকে ভয়ংকর ভাইরাস হলো ম্যালওয়ার। আমরা যখন ইন্টারনেট থেকে কোন ফাইল ডাউনলোড করি। তখন সেই ডাউনলোড ফাইলগুলোর মধ্যে এই ভাইরাসটি আসতে পারে। এ ভাইরাসটি যখন আপনার কম্পিউটারে চলে আসবে। তখন থেকে এর কার্যক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়। এরপর থেকে আপনার কম্পিউটার ধীরে ধীরে ড্যামেজ হতে শুরু করে। 

ওয়েব স্ক্রিপটিং ভাইরাস

কম্পিউটারে লুকায়িত ভাইরাস গুলোর মধ্যে ওয়েব স্ক্রিপটিং ভাইরাস অন্যতম। এছাড়াও এই ভাইরাসটি মূলত ছদ্মবেশ ধারণ করে থাকে। অর্থাৎ আপনার কম্পিউটারে ফোল্ডারের মতই এই ভাইরাস গুলো আকার ধারণ করে। ওয়েব স্ক্রিপটিং ভাইরাস গুলো একটি ওয়েবসাইটের লিংক,ইমেজ, ভিডিও ও কোডিং এ নিজেকে লুকিয়ে রাখে। অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা যখন এসব আক্রান্ত ফাইল ডাউনলোড বা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তখন আপনার কম্পিউটারকে এটি আক্রান্ত করে ফেলে। বিশেষ করে আপনি যদি কম্পিউটারে এই ভাইরাস আক্রান্ত কোনো ফাইল ডাউনলোড করেন। তাহলে অল্প দিনে আপনার কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

অ্যাডওয়ার ভাইরাস

কম্পিউটার ভাইরাস গুলোর মধ্যে অধিক ক্ষতিকর একটি ভাইরাস হলো অ্যাডওয়ার। আমরা যখন ইন্টারনেট মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিজিট করি। তখন সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারে অ্যাডওয়ার ভাইরাস প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকবে। যখন এই ভাইরাস আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করে,তখন আপনি ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময় বিভিন্ন রকম বিজ্ঞাপন দেখতে পারবেন। 

ওভাররাইড ভাইরাস

ওভাররাইড ভাইরাস মূলত নির্দিষ্ট ফাইল বা এ্যাপ্লিকেশনকে টার্গেট করে সংক্রমন শুরু করে। সংক্রমিত করার পর, তার নিজস্ব কোড দ্বারা ফাইলের কনটেন্টকে ওভাররাইট করা শুরু করে। এই ভাইরাস ধীরে ধীরে এটি একটি কম্পিউটারের সম্পূর্ণ ফোল্ডার ও ফাইলের ডাটা ধ্বংস করে দেয়। 

ফাইল ইনফেক্টর 

কোন ফোল্ডারকে ভাইরাস মুক্ত রাখার জন্য আমরা .exe করে রাখি। কিন্তু আমরা যখনই .exe ফাইলকে রান করি,তখন ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাস প্রোগ্রামকে স্লো করে দিতে পারে ও সিস্টেম ফাইলকে ড্যামেজ করে দিতে পারে। তাই আপনার যদি কখনো মনে হয় .exe ফাইল রান করার সময় স্লো হয়ে যাচ্ছে। তাহলে অবশ্যই রান করা থেকে বিরত থাকবেন। এর পাশাপাশি একটি অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করবেন। 

কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখার উপায়    

উপরে আমরা ভাইরাস কত প্রকার ও কি কি তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আপনাকে কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখার উপায় জানতে হবে। কারণ আপনার কম্পিউটারে যদি একবার ভাইরাস প্রবেশ করে তাহলে আপনার কম্পিউটার নষ্ট করে দিতে পারে। এই কারণে আপনি যদি আগে থেকেই সতর্ক থাকেন তাহলে কিন্তু আপনার কম্পিউটার ভালো থাকবে। 

কম্পিউটার ভাইরাসমুক্ত রাখার অন্যতম কয়েকটি উপায় হলো অপরিচিত ওয়েবসাইট থেকে কোন সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, সেই ওয়েবসাইট বা সফটওয়্যার এর মধ্যে ভাইরাস আছে কিনা। বিশেষ করে সেসব সফটওয়্যার টাকা দিয়ে কিনতে হয়। আপনি যদি ফ্রিতেই সেই সফটওয়্যার গুলো ডাউনলোড করেন, তাহলে উক্ত সফটওয়্যারের মধ্যে ভাইরাস থাকার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেশি থাকে। 

তাই পেইড কোন সফটওয়্যার আপনি ফ্রিতে ডাউনলোড করবেন না। এছাড়াও কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখার জন্য আপনি এন্টিভাইরাস ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি টাকা দিয়ে এন্টিভাইরাস কিনতে পারেন তাহলে অনেক ভালো হবে। এছাড়াও এমন অনেক এন্টিভাইরাস আছে যেগুলো আপনি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন। 

উপসংহার

এই ছিল কম্পিউটার ভাইরাস কাকে বলে ও কম্পিউটার ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখার উপায় নিয়ে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আজকের আলোচনার মাধ্যমে আপনি কম্পিউটার ভাইরাস নির্বাচন করতে পারবেন। এর পাশাপাশি কিভাবে কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখা যায় সেটাও করতে পারবেন। এছাড়াও কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখার জন্য কয়েকটি টিপস শেয়ার করেছি,সেগুলো অনুসরণ করলে আপনার কম্পিউটার অবশ্যই ভাইরাস মুক্ত হবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button