Study

অভাগীর স্বর্গ গল্পের অনুশীলনী সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ২০২১

 

অভাগীর সর্গ সৃজনশীল প্রশ্নও

১নং সৃজনশীল প্রশ্ন

এই নিত্যুর অভিযােগে গফুর যেন বাকরােধ হইয়া গেল। ক্ষণেক পরে ধীরে ধীরে কহিল, কাহন খানেক খড় এবার ভাগে পেয়েছিলাম । কিন্তু গেল সনের বকেয়া বলে কতামশায় সব ধরে রাখলেন কেঁদে কেটে হাতে পায়ে পড়ে বললাম, বাবু মশাই, হাকিম তমি, তােমার রাজত্ব ছেড়ে আর পালাব কোথায়? আমাকে পাশেক বিচুলি না | হয় না চলে খড় নেই বাপ বেটিতে থাকি, তাও না হয় তালপাতার গোঁজাগাজা দিয়ে এ বর্ষা কাটিয়ে দেব, কিন্তু না খেতে পেয়ে আমার মহেশ যে মরে যাবে।

ক. ‘কাঙালীর’ বাবার নাম কী?

খ, তাের_হাতের মাগুন যদি পাই, আমি_সগ্যে যাব’- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্ণ’ গল্পের যে সমাজচিত্রের ইঙ্গিত রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ, কাঙালীর সঙ্গে উদ্দী-পকের ‘গফুরের’ সাদৃশ্য থাকলেও কাঙালী সম্পূর্ণরূপে গফু’রের প্রতিনিধিত্ব করে না।’- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর :

 

 

 

 

ক) কাঙালীর বাবার নাম রসিক বাঘ।

খ) উক্তিটিতে অভাগীর সংস্কার ও বিশ্বাসের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অভাগী সংস্কারে বিশ্বাসী মানুষ। ঠাকুরদাস মুখুয্যের সদ্যমৃত বয়সী স্ত্রীকে শ্মশানে পুড়তে দেখে অভাগী, যেখানে মুখুয্যের স্ত্রী ছেলের হাতে আগুন পায় । হিন্দুধর্মের সংস্কার অনুসারে অভাগীর বিশ্বাস মুখুয্যের স্ত্রী স্বর্গে যাবে। তাই অভাগী মৃত্যুর পর ছেলের হাতের আগুন প্রত্যাশা করে; যেন সে নিজেও মুখুয্যের স্ত্রীর মতাে স্বর্গে যেতে পারে ।

গ) উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ‘ গল্পের দরিদ্র ও অধিকারবণিত মানুষের সামাজিক জীবনের ইতি রয়েছে । আমাদের সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট। এই বৈষম্য ছাড়াও ধর্ম-বর্ণ, জাতি-সম্প্রদায়ের মধ্যেও ব্যাপক বৈষম্য লক্ষ করা যায়।

তাতীতে হিন্দুধর্মের বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতিতে মানুষে মানু৷ে অনেক বৈষম্য ছিল। সমাজ সংস্কারের গতিত তা সিদ্ধ হলেও মানবিকতার দিক থেকে তা ছিল অত্যন্ত হন অমানবিক। উদ্দীপকে তৎকালীন হিন্দু জমিদার শাসিত সমাজব্যবস্থায় একজন দরিদ্র মুসলমানের অসহায়ত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । অন্যদিকে সমাজের সদুল মানুষের শােষণচিত্র প্রকাশ পেয়েছে। বাবা-মেয়ের সংসারে একমাত্র গরু মহেশকে বাঁচাতে সে বিচুলি প্রার্থনা করেছে। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালী তার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে কাঠের জন্য অনেক মিনতি কান্নাকাটি করে ও পায়নি। গফুরও পায়নি এক আঁটি বিচুলি বা খড় মহেশকে খাওয়ানাের জন্য। কাঙালী নীট জাত বলে মায়ের সৎকারে কাঠ চেয়ে বঞ্চিত হয়েছে। গফুর অন্য জাতের বলে শোষণের শিকার হয়েছে। এভাবে উদ্দীপক ও ‘অভাগীর স্বর্গ’ গলে গরিব, বঞ্চিত ও শােষিত মানুষের সমাজচিত্র সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ঘ)

কাঙালীর সঙ্গে উদ্দীপকের গফুরের সাদৃশ্য থাকলেও কাঙালী সম্পূর্ণরূপে গফুরের প্রতিনিধিত্ব করে না।’- মন্তব্যটি যথার্থ ।

শােক সৰ দেশে সব কালেই গরিব-দুঃখী মানুষের শ্রম শােষণ করে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে চলে। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার নতুন কোনাে ব্যাপার নয়। যুগ যুগ ধরেই তা চলে আসছে। সবল ব্যক্তিরা অত্যাচার করে আর দুর্বলরা মুখ বুজে সহ্য করে । উদ্দীপকের গফুর দরিদ্র । সে জমিদারের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে। গত সনের বকেয়া হিসাব করে গফুরের ভাগের সব খড় নিয়ে যায় মালিক কামশায় । অনেক অনুনয়, বিনয়, অশ্রুপাত করেও প্রিয় গরু মহেশের জন্য সামান্য খড়বিচুলিও পায় না সে।

অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালী তার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে কাঠের জন্য অনেক কান্নাকাটি করেও জমিদারের গােমস্তা অধর রায়ের কাছ থেকে তা পায়নি। দরিদ্র বলে কেউ তাকে কাঠ দিতে রাজি হয়নি। বরং দুলে জাতের কাউকে পােড়ানাে হয় না বলেও ভর্ৎসনা করেছে । এখানে গফুরের প্রত্যাশা এবং কাঙালীর প্রত্যাশায় মিল থাকলেও তা এক নয়। উদ্দীপকে গফুর কর্তামশায়ের কাছে মহেশের জন্য বিচুলি চেয়েছিল । আর ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালী তার মায়ের সন্ধারের জন্য কাঠ চেয়েছিল। এই দুজনই হতদরিদ্র। কিন্তু তাদের চাওয়ার মধ্যে দুজনের বেদনাবােধ দুরকম।

এ কারণেই মিল থাকলেও গফুর ও কাঙালী পরস্পরের সম্পূর্ণ প্রতিনিধি নয়। কারণ তাদের যন্ত্রণার গভীরতা এক রকম নয়, ভিন্ন ভিন্ন ।


আরও দেখুনঃ  (২০২১) কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button