Special

প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ কি, লক্ষণ ও চিকিৎসা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আশা করি আপনি ভালো আছেন। আবারো আপনাদের সামনে স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি টিউটোরিয়াল নিয়ে হাজির হলাম। মানবদেহের একটি অন্যতম জটিল রোগ হল প্যানক্রিয়াটাইটিস। যাকে আমরা সচরাচর অগ্ন্যাশয় প্রদাহ বলে থাকি। 

বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষের এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়। এর বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে। যার ফলে প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ সৃষ্টি হয়। আজকে আপনাদের সামনে মূলত প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ কি,প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের লক্ষণ ও প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি, পুরোটা সময় মনোযোগ সহকারে পড়বেন। 

প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ কি

প্যানক্রিয়াটাইটিস হলো অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ,যা পাকস্থলীর পিছনে থাকা অগ্ন্যাশয় বৃহদাকৃতির অঙ্গ। এই রোগের ফলে জারক রস ও বিভিন্ন প্রকার হরমোন ক্ষরণ হয়ে থাকে।প্যানক্রিয়াটাইটিস দুই রকম হয়ে থাকে। একটি হলো তীব্র অগ্ন্যাশয় প্রদাহ ও আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি অগ্ন্যাশয় প্রদাহ।

প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের কারণে উদরপেটের উপরে ব্যাথা অনুভব হয়, বমি বমি ভাব ও বমি হয়। পিঠের মাঝখানে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হয়। প্রকট প্যানক্রিয়াটাইটিস প্রদাহে জ্বর আসে ও কয়েকদিনের মধ্যেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। দীর্ঘমেয়াদি প্যানক্রিয়াটাইটিস প্রদাহে ওজন কমে যায়,মেদদাস্ত ও ডায়রিয়া দেখা যায়। এছাড়াও সংক্রমণ, রক্তক্ষরণ মধুমেহ বা অন্যান্য অঙ্গেও নানা জটিলতা দেখা যেতে পারে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই,চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা যায়। 

প্যানক্রিয়াটাইটিস কত প্রকার?

প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ দুই রকমভাবে হতে পারে।অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস ও ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস।

অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস: সাধারণত পেটে মাঝারি হতে তীব্র ব্যথা শুরু হলে সেটা অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটইটিস। কোন কারণে আমাদের প্যানক্রিয়াসে আকস্মিক তীব্র প্রদাহ ঘটলে তাকে অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস বলা হয়ে থাকে।এই রোগ অতিরিক্ত মদ্যপান, রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস,অগ্ন্যাশয়ে আঘাত, এলোপ্যাথিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া,অতিরিক্ত ওজন,সার্জারি, ইনফেকশন,জন্মগত ত্রুটি, আলসার বা জিনগত কারণেও এই রোগ হতে পারে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এ রোগের নির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না ।

ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস: প্রচুর মদ্যপানের কারণে মূলত দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক প্যানক্রিয়াটিটিস হয়ে থাকে। ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীর ঘন ঘন পেটে ব্যথা হয়,খাদ্য হজম হয় না,ওজন হ্রাস পায়,ফেনাযুক্ত পায়খানা ও ডায়াবেটিস হতে পারে। 

প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের লক্ষণ

যেহেতু প্যানক্রিয়াটাইটিস একটি মারাত্মক জটিল রোগ। এই কারণে এই রোগের লক্ষণগুলো আপনার জানা দরকার। কারণ আপনার মধ্যে যদি এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাহলে আপনি যদি বুঝতে না পারেন। তাহলে ভবিষ্যতে আরো জটিল আকার ধারণ করবে। এই কারণে আগে থেকেই যদি এই রোগ বিষয়ে আপনার দক্ষতা থাকে। তাহলে শুরু থেকেই প্যানক্রিয়াটাইটিস রক্তের প্রতিহত করতে পারবেন। প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো: 

  • পেটের উপরিভাগে ও পিঠে তীব্র ব্যথা।
  • পেট ফুলে যাতে পারে।
  • বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
  • দ্রুত হৃদস্পন্দন হয়।
  • তীব্র ব্যথার সঙ্গে বমি হয়।
  • অনেক ক্ষেত্রেই রোগী অজ্ঞান হয়ে যতে পারে।
  • তীব্র জ্বর হয়।
  • দ্রুত ওজন কমে যায়।
  • অতিরিক্ত ঘাম হয়।
  • অগ্নাশয় বা পিত্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া।
  • পিত্তনালি সরু হয়ে গেলে জন্ডিস দেখা দিতে পারে।
  • হঠাৎ প্রদাহে রোগী মারাও যেতে পারে।
  • অগ্ন্যাশয়ের ক্ষতিগ্রস্ত কোষে ঘা অথবা ফোঁড়া তৈরি হয়।
  • শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়।
  • অগ্ন্যাশয় সংলগ্ন অন্ত্রনালি সরু হয়ে যেতে পারে।
  • জটিল রোগীর ডায়াবেটিস হতে পারে।
  • শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে।
  • অন্যান্য সকল অঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে যেমন- কিডনি বিকল হওয়া, লিভার বিকল হওয়া ইত্যাদি।

এছাড়াও ভালো হয়ে যাওয়ার পরও অনেক রোগী দীর্ঘমেয়াদি ধীরগতির প্রদাহে আক্রান্ত হতে পারে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু না হলে রোগী মারা যেতে পারে। এই কারণে আপনার যদি প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। তাহলে অতি দ্রুতই রেজিস্টার প্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

প্যানক্রিয়াটাইটিস কেন হয়

 আপনার যদি প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের কিছুটা লক্ষণ থাকে। তাহলে অতি দ্রুতই আপনাকে এ রোগের প্রতিরোধ করতে হবে। তবে এর জন্য আপনাকে আগে প্যানক্রিয়াটাইটিস কেন হয় তা জানতে হবে। আপনি যদি প্রথমে রোগ হয় কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারেন। তাহলে সেই কাজগুলো থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন। তখন দেখবেন আপনার প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগটা একটু হলেও কমে যাবে। চলুন দেখে নেই প্যানক্রিয়াটাইটিস কেন হয়।

প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান করা। এছাড়াও যাদের পিত্তথলিতে পাথর রয়েছে। তাদের এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আবার অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন ক্যালসিয়ামের ঘাটতি যখন বেড়ে যায়। তখন প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের আক্রমণ। তবে এ রোগ হওয়ার লক্ষ্য কারণ হলো অতিরিক্ত মদ্যপান করা। 

তাই আপনার যদি অতিরিক্ত মদ্যপান করার বদভ্যাস থেকে থাকে। তাহলে আপনাকে অতি দ্রুতই এই বদঅভ্যাস পরিহার করতে হবে। ধূমপান করার অভ্যাস থাকে। সেটাও ছেড়ে দিতে হবে। আবার আপনারা যদি মনে হয় আপনার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। তাহলে অবশ্যই আলট্রাসনোগ্রাম করতে হবে। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ হওয়ার মূল কারণ কি। 

প্যানক্রিয়াটাইটিস চিকিৎসা

প্যানক্রিয়াটাইটিস যদি একটি মারাত্মক জটিল রোগ। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর সফল অনেক ট্রিটমেন্ট রয়েছে। এই কারণে আপনার যদি এই রোগটি হয়ে থাকে তাহলে চিন্তা না করে। অবশ্যই এ রোগের চিকিৎসা করতে হবে। 

যদি আপনার মধ্যে প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়,যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। মনে রাখতে হবে, আইসিইউ এর ব্যবস্থা রয়েছে, এমন হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করা ভালো হবে। কারণ এ সময়ে হঠাৎ এই রোগীর বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হতে শুরু করে, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

সেক্ষেত্রে আইসিইউ বা সিসিইউ জরুরি থাকা জরুরী। যদি এই রোগ পিত্তে পাথরের জন্য হয় তাহলে অস্ত্রোপচার বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্যানক্রিয়াটাইটিস সারিয়ে নিয়ে তবে অস্ত্রোপচার করতে হবে। 

অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস পুরোপুরি সেরে যেতে পারে। চিকিৎসকেরা অবশ্য বলেন, কেউ যদি বারবার অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত হন, তখন প্যানক্রিয়াস ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। সেক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের ক্ষেত্রে শুধু উপসর্গের চিকিৎসা হয়। ঠিক মতো হজম না হলে, সেক্ষেত্রে এনজ়াইম সাপ্লিমেন্ট দিতে হয়। ব্যথা হলে, ব্যথার ওষুধ দিতে হয়। অনেকের আবার দেখা যায়, পাচক রস পুরোটাই প্যানক্রিয়াসে থেকে যাচ্ছে। অন্ত্রে পৌঁছতে পারছে না। সেক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপি বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাইপাস করা হয়, যাতে পাচক রস অন্ত্রে পৌঁছতে পারে। 

অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস হলে ভয় পাওয়ার কোন নাই। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে অবশ্যই সুস্থ হয়ে সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে খাবারের দিক বিশেষ নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে হজম হয় না এমন খাবার পরিহার করতে হবে। তাহলে ইনশাল্লাহ আশা করা যায় এ রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। 

প্যানক্রিয়াটাইটিস ভাল রাখার উপায়

প্যানক্রিয়াস মারাত্মক পেটের একটি অসুখ। যদিও এ রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি নিজে থেকেই এই রোগের চিকিৎসা করতে পারেন। তাহলে অল্প দিনে প্যানক্রিয়াটাইটিস থেকে মুক্তি পাবেন। এই জন্য নিয়মিত আপনার খাদ্য তালিকায় যদি এই ফলগুলো রাখতে পারেন। তাহলে অবশ্যই আপনি এই রোগ থেকে ভালো থাকবেন। 

 মিষ্টি আলু,টমেটো, লাল আঙ্গুর, আপেল, শাকসবজি, বাঁধাকপি,মাশরুম,দই,বেরি ফল,চেরি ফল ও মিষ্টি কুমড়া নিয়মিত খেলে এই রোগ থেকে কিছুটা হলে উপশম পাওয়া যায়। তাই আপনি নিয়মিত এই খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় রাখবেন। 

পরিশেষে কিছু কথা

এই ছিল আজকে প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ কি, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। আশা করি আপনি এখন প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। তাই আপনার যদি প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ হয়ে থাকে তাহলে ভয় না করে। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। এর পাশাপাশি উপরোক্ত খাদ্যগুলো আপনি যদি নিয়মিত খেতে পারেন। তাহলে এ রোগ থেকে কিছুটা হলেও উপশম পেতে পারেন। 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button